রিসালাত ( الرِّسَالَةُ ) (পাঠ ৭)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা আকাইদ | - | NCTB BOOK
121
121

রিসালাত অর্থ বার্তা, সংবাদবহন, চিঠি, খবর পৌঁছানো ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার বাণী ও পরিচয় মানুষের নিকট পৌঁছানোর দায়িত্বকে রিসালাত বলে।

আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টিকর্তা। তিনিই একমাত্র রিজিকদাতা, রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা। কিন্তু মানুষ নিজে থেকে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ করতে পারে না। বুদ্ধি-বিবেক খাঁটিয়ে মানুষ বুঝতে পারে যে এ মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছেন। কিন্তু তিনি কে, তার গুণাবলি কীরূপ, তার ক্ষমতা কতো এসব কিছুই মানুষ নিজে নিজে জানতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন পথপ্রদর্শ কর। আল্লাহ তায়ালা নিজেই মানুষের মধ্য থেকে এসব পথপ্রদর্শক নিয়োগ করেছেন। তারা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার সঠিক পরিচয় তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা তাওহিদ ও আখিরাত সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার বাণী ও আদেশ-নিষেধ মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। এসব দায়িত্বকেই এক কথায় রিসালাত বলা হয়। যাঁরা এসব দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা হলেন নবি কিংবা রাসুল। সৎপথ প্রদর্শনের জন্য মহান আল্লাহ সকল জাতির নিকট নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا

অর্থ: "এবং নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি।" (সুরা আন-নাহল, আয়াত ৩৬)
নবি-রাসুলগণ আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। তাঁরা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁরা সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

রিসালাতে বিশ্বাস করা ইমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাওহিদে বিশ্বাস করার সাথে সাথে আমাদের রিসালাতেও বিশ্বাস করতে হবে। কেননা রিসালাতে বিশ্বাস না করলে মুমিন হওয়া যায় না।

নবি-রাসুলগণ রিাসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা ছিলেন আল্লাহ তায়ালা ও মানবজাতির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী। তাঁদের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ তায়ালার সঠিক পরিচয় পাই। তাঁরাই আমাদের নিকট মহান আল্লাহর বাণী নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। সুতরাং রিসালাত ও নবি-রাসুলগণের উপর বিশ্বাস করা অপরিহার্য। তাঁদেরকে অস্বীকার করলে ইমানের সকল বিষয়ই অস্বীকার করা হয়। যেমন- তোমার কোনো বন্ধু কারো মাধ্যমে তোমার নিকট কোনো সংবাদ প্রেরণ করল। এক্ষেত্রে সংবাদ বাহকের প্রতি সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তাহলেই কেবল বাহকের আনীত সংবাদ বিশ্বাস করা যাবে। কেননা সংবাদ বাহককে বিশ্বাস করা না গেলে তার আনীত সংবাদও বিশ্বাস করা যায় না। এতে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ফলে তোমার বন্ধুর উদ্দেশ্যও সাধিত হয় না।

তদ্রুপ নবি-রাসুলগণ হলেন সংবাদ বাহকের ন্যায়। তাঁরা আল্লাহ তায়ালার বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। যদি আমরা তাঁদের অস্বীকার বা অবিশ্বাস করি, তাহলে তাঁদের আনীত কিতাব ও বর্ণনার মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তায়ালা, আখিরাত, কিয়ামত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্ম নেবে। সুতরাং সর্বপ্রথম তাঁদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালাই তাঁদেরকে সংবাদ বহনের জন্য মনোনীত করেছেন-এ কথাও বিশ্বাস করতে হবে। তবেই আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে ইমানের সব বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করতে পারব। সুতরাং বোঝা গেল, রিসালাতে বিশ্বাস করার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা সকল নবি-রাসুলের প্রতি বিশ্বাস করব। কাউকে অবিশ্বাস করব না। আল-কুরআনে বলা হয়েছে-

لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ

অর্থ: "আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮৫)

অর্থাৎ আমরা সকলের প্রতিই বিশ্বাস করি। কারো প্রতি অবিশ্বাস করি না। নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস করা ফরজ। তাঁদেরকে অবিশ্বাস করলে ইমানদার হওয়া যায় না। বরং আমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা নবি-রাসুলগণের কথায় বিশ্বাস না করে আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়ে গেছে। অতএব, আমরা সমস্ত নবি-রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ করে চলব।

দলগত কাজ: রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা কর।
Content added By
Promotion